বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে স্টুয়ার্ট লর পরিচয় দীর্ঘদিনের। ২০১১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। দুই বছর ছিলেন সেই দায়িত্বে। এরপর ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও তিনি ছিলেন বাংলাদেশ দলের যুবাদের পরামর্শকের দায়িত্বে। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান কোচ হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হলো এই অস্ট্রেলীয় কোচের।
গেম ডেভেলপমেন্টের ব্যাটিং পরামর্শক ওয়াসিম জাফরও বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন নয়। ২০২০ সালে একই পদে তিনি কিছুদিন কাজ করে গেছেন। এবার একই দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘ পরিসরে কাজ করবেন এই ভারতীয় সাবেক। দুজন মিলে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে ভালো ক্রিকেটার তৈরির পাশাপাশি ভালো মানুষ তৈরি করতে চান।
আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সে আশ্বাসই দিলেন দুজন। ল যেমন বলছিলেন, ‘আবার ফিরে এসে ভালো লাগছে। আজ এখানে এসে কিছু পরিচিত, বন্ধুত্বপূর্ণ মুখ দেখতে পেলাম। অনেক ভালো স্মৃতি আছে এখানে। আমি অনেক প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। সত্যি কথা বলতে, আন্তর্জাতিক দলের প্রধান কোচ হিসেবে খুব বেশি কোচিংয়ের সুযোগ থাকে না। কিন্তু, এই দায়িত্ব আমাকে উঠতি ক্রিকেটার নিয়ে কাজ করার সুযোগ এনে দেবে, যেখানে আমি পার্থক্য এনে দিতে পারব। শুধু একজন ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে নয়, তরুণ ব্যক্তিত্ব গড়ার ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারব। তাই সুযোগটা যখন এল, আমার জন্য “হ্যাঁ” বলা খুব সহজ ছিল।’
২০১৬ সালের বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের মধ্যে জাতীয় দলে নিয়মিত খেলছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ল তাদের উদাহরণ টেনে অনেকটা গর্ব করেই বলছিলেন, ‘আমি ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ করেছি। যেখানে মিরাজ, শান্তরা ছিল। এখন ওদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। এটা যে শুধুই তরুণ ক্রিকেটার তৈরির জায়গা, তা কিন্তু না। আমি জানি যে এটা ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, এটাই হওয়া উচিত মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এটা মানুষ গড়ে তোলারও জায়গা। আমি মিরাজ-শান্তদের যখন দেখি, ওদের চেহারায় বিশাল হাসি দেখতে পারি। ওরা খুব গর্বিত নিজেদের পরিবার নিয়ে। ওরা এখন বিবাহিত। ওরা খুদে ক্রিকেটার থেকে শুরু করে এখন বড় হচ্ছে। ক্রিকেটে তো অবদান রাখছেই, ক্রিকেটের বাইরেও অনেক কিছু করেছে। এটাই আমি চাই।’
সে জন্য মাঠের বাইরেও ক্রিকেটারদের ব্যক্তিত্ব তৈরিতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ল। বিশেষ করে ক্রিকেটারদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ভালো ও খারাপ দিকটা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চান। ওয়াসিমও ল’র সুর ধরে বলছিলেন, ‘আপনি যখন অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলেন, তখন অনেক কিছুই পরিষ্কারভাবে দেখতে পারেন এবং এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন। তবে এখানে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই অনূর্ধ্ব-১৯ ছেলেদের প্রথমে তৈরি করা এবং পরের ধাপের জন্যও প্রস্তুত করা—এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আশা করি আমরা দুজন এবং অন্য স্টাফরা মিলে তাদের ভালো ক্রিকেটার, ভালো মানুষ হিসেবে সামনে এগিয়ে নিতে পারব।’
নতুন কোচিং স্টাফের অধীনে আজ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৪০ জন ক্রিকেটার নিয়ে ফিটনেস ক্যাম্প শুরু হয়ে। এর পর ২৩ জুলাই থেকে বিকেএসপিতে শুরু হবে যুবাদের স্কিল ক্যাম্প। সেখানে প্রায় তিন সপ্তাহ চলবে নেট অনুশীলন। প্রাথমিক স্কোয়াডের সদস্যদের নিয়ে অনুশীলন ম্যাচও হবে সেখানে। প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স দেখে বাছাই করা হবে অনূর্ধ্ব-১৯-এর মূল দল। আগামী নভেম্বরে পাকিস্তান সফর দিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নতুন দলটি। সফরে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে পাঁচটি একদিনের ও একটি চার দিনের ম্যাচ খেলবে যুবারা।
এ জাতীয় আরো খবর..