আসন্ন ঈদ উপলক্ষে কোরবানি ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। আত্মীয়-স্বজনের ঈদ উদযাপনকে আনন্দময় করতে সাধ্যমতো বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন তাঁরা। ফলে দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়। গত পাঁচ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
চলমান ডলারসংকটের মধ্যে একে আশার আলো হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত ছয় মাসে আরো ১০ লাখের মতো শ্রমিক বিদেশে গেছেন। তাঁদের পাঠানো আয় অচিরেই রেমিট্যান্সের খাতে যোগ হবে। ফলে রেমিট্যান্স বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি। তবে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম পাঁচ দিনেই প্রবাস আয়ে জোয়ার দেখা যাচ্ছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রেমিট্যান্স আসার এই ধারা খুবই ইতিবাচক। সাধারণত প্রতি ঈদের আগেই রেমিট্যান্স বাড়ে। তবে এবারের রেমিট্যান্স আসার হার একটু বেশি। আগামী কয়েক দিন রেমিট্যান্স আরো বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মে মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। অথচ জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় জুনে রেমিট্যান্স কমেছে পাঁচ কোটি ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬.১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
এদিকে সদ্যোবিদায়ি ২০২১-২২ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের সর্বশেষ মাস জুনে প্রবাসীরা ১৮৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৯৩.৪৫ টাকা ধরে) যা ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বেশি। সদ্যোবিদায়ি (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ১৮৭ কোটি ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ডলার, নভেম্বরে ১৫৩ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ডলার, মার্চে ১৮৬ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২০১ কোটি ডলার এবং মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের সর্বশেষ মাস জুনে ১৮৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
এদিকে বৈধ পথে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে অন্যতম রেমিট্যান্সে সরকারি প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তও শিথিল করা হয়েছে। এর আগে পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠালে তার বিপরীতে প্রণোদনা পেতে হলে আয়ের উৎসা দেখাতে হতো। এখন সেই শর্তও শিথিল করা হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..