এবার মসলার চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ১৮ জন কর্মকর্তা। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। প্রত্যেক কর্মকর্তার পেছনে যাবে প্রায় ৫ লাখ টাকা করে। তবে প্রস্তাব ছিল প্রায় ৬৫ জনের জন্য। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে এই সংখ্যা কমে এসেছে। ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত ২৮ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিদেশ সফরের প্রস্তাবটিও অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দূর করা এবং কৃচ্ছ সাধনের জন্য বৈদেশিক সফরকে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফরের লাগাম টানতে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে সময় সময়। এরই মধ্যে বৈদেশিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের নামে দুই ব্যাচে ৯ জন করে ১৮ জনের বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, অহেতুক বিদেশ সফর একধরনের অপচয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। পরিকল্পনা কমিশন পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আগের তুলনায় এ রকম বিদেশ সফরের ঢালাও প্রস্তাব কমে এসেছে। একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ না হলে বিদেশ সফর বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পটির দায়িত্বে ছিল পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এটি অনুমোদনের পর এ বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক প্রস্তাবে বৈদেশিক শিক্ষা সফরের জন্য আরও বেশি অর্থ ও ব্যক্তির প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রায় ৬৫ জন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আলাপ-আলোচনার পর দুই ব্যাচে ৯ জন করে ১৮ জনের ব্যয়ের সংস্থান রাখার সুপারিশ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যেসব দেশে উন্নতমানের মসলা চাষ হয় এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়, সেসব দেশে শিক্ষাসফর করতে হবে। বিশেষ করে ভারত, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে উন্নত জাতের মসলা চাষ হয়।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে-২৮ হাজার ৬৫২টি মসলা প্রদর্শনী ও চারা কলম উৎপাদন-আমদানি করা। এছাড়া ৩০২টি কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে পিএসআইসহ ৯৩টি পাওয়ার টিলার, ৭০টি পাওয়ার টিলার অপারেটিভ অনিওন প্লান্টার, ৭৫টি পাওয়ার টিলার অপারেটিভ গারলিক প্লান্টার অপারেটিভ কেনা হবে। আরও আছে-২৫টি দারুচিনি শুকানোর যন্ত্র এবং ৩৯টি মরিচ শুকানোর যন্ত্র কেনা হবে। সেই সঙ্গে সীমানাপ্রাচীর এবং বিভিন্ন শেড নির্মাণ, ২ হাজার ৬৫০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, ৪৫ ব্যাচ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ১৩৫ ব্যাচ কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ এবং ১ হাজার ৬৫০টি কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনার আয়োজন করা হবে।
পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সোমবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প অনুমোদন হলেও সব অর্থই ব্যয় করা যাবে না। সংশ্লিষ্টরা যদি প্রয়েজনীয়তার যুক্তি তুলে ধরতে পারেন, তাহলেই কেবল অর্থ বিভাগের নতুন পরিপত্র অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অর্থ এ খাতে ব্যয় করা যাবে। তবে একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে এখন প্রকল্প মানেই যে বিদেশ সফর থাকতে হবে-এ প্রবণতা কমেছে। আমরা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। এছাড়া পিইসি সভা হোক আর একনেক সভা হোক, সেগুলোয় যেসব মতামত দেওয়া হয়, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিপালিত হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, মসলার অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বাজারমূল্যও অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে মসলার বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। এদেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলা ব্যবহার হলেও মাত্র ৭ ধরনের মসলা উৎপাদিত হয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার বেশির ভাগই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।
সূত্র জানায়, পিইসি সভায় প্রশ্নের মুখে পড়ে প্রকল্পটির বিভিন্ন ব্যয় প্রস্তাব। এর মধ্যে কৃষক প্রশিক্ষণ, কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে বলা হয়। এছাড়া অনেক খাতের প্রস্তাবিত (তখনকার) ব্যয় বাদ দিতে বলা হয়। এগুলো হলো-পরামর্শক খাতে কনসট্রাকশন কনসালটেন্সি, বেইজলাইন সার্ভে, ইম্প্যাক্ট সার্ভে, ব্যস্থাপনা ব্যয়, গ্যাস ও জ্বালানি, কৃষক গ্রুপ গঠন, মধ্যবর্তী মূল্যায়ন, পলিশেড, কোল্ড স্টোরেজ, গ্রিনহাউজ, আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন মেরামত ও সংস্কার প্রভৃতি খাত। পিইসি সভার সুপারিশ মেনে এসব খাত বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে ২৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় কমিয়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করা হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ সফর, ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ সফর, বিল্ডিং দেখতে বিদেশ সফর এবং পুকুর খনন দেখতেও বিদেশ সফরের প্রস্তাব ছিল বিভিন্ন প্রকল্পে। এসব প্রস্তাব সেসময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
এ জাতীয় আরো খবর..