আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের খাবার নেই, আশ্রয় নেই এবং এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বাখতার নিউজ এজেন্সির মহাপরিচালক আবদুল ওয়াহিদ রায়ান এ তথ্য দিয়েছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
আবদুল ওয়াহিদ রায়ান বলেন, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় আঘাত হানা ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার ৬০০ মানুষ আহত হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ৮০০টির মতো বাড়ি তছনছ হয়ে গেছে।
আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালেবান গোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ক্ষতি পর্যালোচনা করে ত্রাণ বিতরণ করছে। কিন্তু দেশটি ইতোমধ্যে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে।
হতাহতদের সহায়তায় হাত বাড়িয়েছে জাতিসংঘও। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় কলেরার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে পাকিস্তান, কাতার ও ইরান থেকে মানবিক সহায়তা পৌঁছেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বিপর্যস্ত পাকতিকা প্রদেশ। সেখানকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা উঠেছে। নিজের পারিবারিক বাড়ির ধ্বংসস্তূপ দেখে আগা জানের চোখ কান্নায় ভরে ওঠে। ‘এগুলো আমার সন্তানের জুতা,’ ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে বলেন তিনি। তার তিন সন্তান এবং দুই স্ত্রী ঘুমন্ত অবস্থায় ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন।
বুধবার ভোরে যখন কম্পন শুরু হয়, আগা জান তখন দৌড়ে ঘরে পরিবারের কাছে যান। তিনি জানান, ‘কিন্তু ততক্ষণে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি আমার বেলচাটাও। আমার করার কিছুই ছিল না। সাহায্যের জন্য চাচাতো ভাইদের ডাকলাম কিন্তু যখন আমার পরিবারকে বের করে আনলাম, ততক্ষণে তারা সবাই মারা গেছে’।
আগা জান যেখানে বসবাস করেন, সেটি পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলার একটি গ্রাম। সেখানেই সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বলে মনে হচ্ছে। সাধারণত কাদা ও পাথর দিয়ে তৈরি এসব বাড়িগুলোতে থাকা প্রায় প্রতিটি পরিবারই অন্তত একজন স্বজন হারানোর শোকে কাতর।
তেমনই আরও একজন হচ্ছে হাবিব গুল। তিনি যখন খবর পান তখন তিনি সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানে করাচি শহরে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। দ্রুত তিনি বারমালে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। নিজের পরিবারের ২০ স্বজনকে হারিয়েছেন তিনি। এদের ১৮ জনই এক বাড়িতে মারা গেছেন।
হাবিব বলেন, কার নাম আপনাকে বলব? আমার বহু স্বজন শহীদ হয়েছেন, তিন বোন, ভাগ্নে, মেয়ে, ছোট বাচ্চারা’।
বিবিসির প্রতিবেদকের দেখা হওয়া প্রত্যেক গ্রামবাসী তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি দেখাতে চাইছিলেন। এর আংশিক কারণ তারা দুনিয়াকে ধ্বংসের ভয়াবহতা দেখাতে চায়, কিন্তু একই সঙ্গে তারা অনেকেই আশা করছিলেন ত্রাণ বিতরণের তালিকায় তাদের নামটাও যুক্ত হবে।
হাবিব গুল বলেন, ‘যদি পৃথিবী আমাদের ভাইয়ের মতো দেখে এবং আমাদের সাহায্য করে, আমরা এখানে আমাদের জায়গায় থাকব। তারা যদি না করে, তা হলে আমরা এই জায়গা ছেড়ে চলে যাব, যেখানে আমরা এতদিন আমাদের চোখের জল নিয়ে কাটিয়েছি’।
এক তালেবান কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। সবচেয়ে জরুরি যে প্রয়োজন তা হচ্ছে গৃহহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার পরিবারের আশ্রয়।
আফগান সরকার এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ক্ষতি পর্যালোচনা ও ত্রাণ বিতরণ করছে। কিন্তু সংকটটি এমন একসময়ে এসেছে, যখন দেশটি ইতোমধ্যে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে।
হতাহতদের সহায়তায় হাত বাড়িয়েছে জাতিসংঘও। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় কলেরার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..