দেশে দুজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন (বিএ.৪ ও ৫) শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক যশোরের দুজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের আংশিক (স্পাইক প্রোটিন) জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে করোনার নতুন এই উপধরনটি শনাক্ত করেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার তাদের জিনোম সিকোয়েন্সের সর্বশেষ তথ্য প্রকাশিত হতে পারে। এতে দেশে ওমিক্রনের নতুন ওই উপধরন সংক্রমের স্পষ্ট একটি চিত্র পাওয়া যেতে পারে।
আরো একজনের মৃত্যু : এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঘণ্টায় দেশে করোনায় আরো একজন মারা গেছেন। তার আগের ২৪ ঘণ্টাতে ২১ দিন পর একজনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ ওই ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে আরো ৮৭৪ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিল ৮৭৩ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১১.৩ শতাংশ।
সর্বশেষ মৃত ব্যক্তি ব্যক্তি পুরুষ এবং তাঁর বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় ২৯ হাজার ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১৯ লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৩ জন।
যবিপ্রবির গবেষক যা জানাচ্ছেন : গতকাল যবিপ্রবির গবেষকদলটি জানায়, ওমক্রিনের নতুন উপধরনে আক্রান্ত দুজনই পুরুষ। তাঁদের একজনের বয়স ৪৪ এবং আরেকজনের ৭৯ বছর। একজন করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ এবং অন্যজন দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং আরেকজন বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের শরীরে জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তাঁরা উভয়েই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে গবেষকরা ধারণা করছেন।
গবেষকদলটি আরো জানায়, বিএ.৪ ও ৫ উপধরনে স্পাইক প্রোটিনে ওমিক্রনের মতোই মিউটেশন দেখা যায়। তবে তার সঙ্গে এই উপধরন ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মতো স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো এসিডে মিউটেশন থাকে। এ ছাড়া এই সাব-ভেরিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্বর অ্যামাইনো এসিডেও মিউটেশন দেখা যায়।
ওমিক্রনের এই দুটি উপধরন গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়। গত মে মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ ভারতে এই সাব-ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এই উপধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সাম্প্রতিককালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও এই সাব-ভেরিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন।
যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই উপধরনটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, অচিরেই পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করে এ বিষয়ে আরো তথ্য জানা সম্ভব হবে এবং এই উপধরন শনাক্তকরণের কাজ তাদের জিনোম সেন্টারে অব্যাহত থাকবে।
আইইডিসিআরের বক্তব্য : আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আলমগীর গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সের সর্বশেষ ফল কাল, পরশু (বুধবার, বৃহস্পতিবার) প্রকাশ হতে পারে। এতে দেশে ওমিক্রনের নতুন উপধরন সংক্রমণের বিষয়ট আরো স্পষ্ট হতে পারে। কারণ আমরা ব্যাপকভাবে জিনোম সিকোয়েন্স করি।
তিনি জানান, প্রথম দিকে বলা হচ্ছিল, এটার সংক্রমণ সক্ষমতা অনেক বেশি; কিন্তু পরে আমেরিকা, ইউরোপ এবং ভারতেও এই উপধরনটি শনাক্ত হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, এর সংক্রমণ সক্ষমতা ওমিক্রনের বি-২ ধরনের মতোই। তবে বিএ.৪ অথবা ৫ যেহেতু নতুন ধরন সেহেতু আগে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদেরও এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘করোনা মহামারি যেহেতু চলমান আছে, সে কারণে এর ধরনে পরিবর্তন আসবেই। আমরা যদি করোনা টিকা নিই, স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে মেনে চলি তাহলে বিপদ কম হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের টিকা যারা নেয়নি তাদের দ্রুত টিকাকেন্দ্রগুলোতে যেতে হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..