ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ও নীতির বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে বলেছে চীন। দেশটি আশা করছে, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো নিজের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা বজায় রাখবে এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ও এক বলয়ের বিশ্ব গড়ার দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রত্যাখ্যান করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক লিউ জিনসং গত বুধবার বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা করেন।
এরপর এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
লিউ জিনসং যুক্তরাষ্ট্রের চীন নীতি বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা করেন। ব্লিংকেন চীনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিনিয়োগ, জোট ও প্রতিযোগিতা’—এই তিন উদ্যোগের কথা বলেছিলেন।
লিউ জিনসংয়ের মতে, এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব, চীন এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বড় ধরনের বিচ্যুতি প্রতিফলিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, অকুজ (অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র) এবং কোয়াড (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া) গ্রুপ এবং সর্বশেষ ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামো (আইপিইএফ) ‘যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক’ এবং ‘ব্যতিক্রমবাদ’।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে লিউ জিনসংয়ের আলোচনা প্রসঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এটি কেবল নিজের জন্য অসম্মান বয়ে আনবে এবং একই সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো ক্ষুণ্ন ও বলয়গুলোর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুধাবন করা উচিত যে তার সুর নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু সেই সুরে কেউ নাচবে না। এক বলয়ের আধিপত্য কারও সমর্থন পাবে না। আন্ত বলয় বিরোধের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ছোট ছোট উঠানে উঁচু দেয়াল নির্মাণ এবং সেগুলোকে সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে বিচ্ছিন্ন করলে ভালো ফল আনবে না।
লিউ জিনসং বলেন, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো তাদের নিজেদের দেশ ও অঞ্চলের মৌলিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখবে এবং শীতলযুদ্ধের মানসিকতা ও বলয়কেন্দ্রিক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা রক্ষা এবং এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য অনেক কষ্টে অর্জিত পরিবেশ রক্ষা করবে বলে চীন বিশ্বাস করে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে লিউ জিনসং মহামারি মোকাবেলায় চীন ও বাংলাদেশের সংহতির কথা উল্লেখ করেন। দুই দেশের জনগণ যাতে আরো বেশি সুবিধা পায়, সে জন্য চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ বাস্তবায়নকে উৎসাহিতকরণ এবং কভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনুরুদ্ধার, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশদ আলোচনায় আগ্রহের কথাও জানান।
রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতি নিয়ে বাংলাদেশ অন্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ আন্ত বলয় সংঘাত ও নতুন শীতল যুদ্ধ সমর্থন করে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে চায়। অর্থনৈতিক নির্মাণ ও উন্নয়নকে জোরদার করতে দুই দেশের সহযোগিতায় বড় প্রকল্পের নির্মাণকে বাংলাদেশ উৎসাহিত করে।
এর আগে গত বছর এপ্রিলে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী উইং ফেঙ্গে বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছিলেন, সম্প্রসারিত কোয়াডে বাংলাদেশ যোগ দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..