×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৩-১২
  • ৩৭ বার পঠিত

নারীবাদ, নারী স্বাধীনতা, নারীর অধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী-পুরুষ বৈষম্য সামাজের বহুল প্রচলিত কয়েকটি শব্দ। যখনই নারীবাদ নিয়ে কথা ওঠে তখনই একপক্ষ এটিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে, অন্যপক্ষ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী অধিকার, নারীবাদ ও সমাজে নারীর অবস্থান নিয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে আলাপ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হকের।

তানিয়া হকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-

ফেমিনিজম অর্থাৎ নারীবাদকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে দেখে। কিন্তু যে আদর্শ সমঅধিকারের কথা বলে সেটাকে কেন নেতিবাচকতার চোখে দেখা হয়?

এটি নির্ভর করছে সমাজে আমরা নারীবাদ শব্দটিকে কীভাবে ব্যবহার করছি সেটার ওপরে। কদিন আগেও রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে দেখি বেশ কয়েকজন মেয়ে একসঙ্গে সিগারেট খাচ্ছে। সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তারা যদি বলে ছেলেরা সিগারেট খেতে পারলে আমরা পারব না কেন? আমার প্রথম কথা হচ্ছে সিগারেট খাওয়া জিনিসটাই একটি খারাপ অভ্যাস। ছেলেরা সিগারেট খেয়ে যে ভালো করছে এমন না। এটা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু এখন মেয়েরা যদি ভাবে সিগারেট খাওয়া তাদের স্বাধীনতার প্রতীক, তাহলে সমস্যা। এগুলো ভুল বার্তা দেয়া। স্বাধীনতা ও নেতিবাচক কাজ, উচ্ছৃঙ্খল আচারণ কিংবা ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বর্বর কাজ করা নারীবাদের প্রতীক হতে পারে না। নারীবাদ এমন একটি আদর্শ যা সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলে। এটাকে মৌলবাদ অর্থাৎ আমি যা করবো তাই ঠিক এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ফলে সমগ্র আদর্শটা অনেকের কাছে নেতিবাচক মনে হয়।
স্বাধীনতার ইতিবাচক ও নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে আমাদের সম্যক ধারণা কেমন?

আমাদের দেশের মূল সমস্যা আমরা নিজেদের সংস্কৃতি থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছি। বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ করে ভারতীয় টিভি, সিনেমায় যেভাবে নারী স্বাধীনতাকে দেখানো হয় সেটা এক কথায় পুরো আদর্শটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা। এখন এই ভুলকে যদি আমাদের মেয়েরা অনুসরণ করে তাহলে সেটা থেকে দুর্নাম আসবে স্বাধীনতা না। আমরা গোড়ায় গোঁড়ামি করে ওপরে ওপরে যে আধুনিকতার ধোঁয়া ওড়াচ্ছি সেটিই নারীবাদ তামাশার একটি জায়গায় নিয়ে গেছে।

নারীর জন্য আলাদা একটি দিবস পালন, আলাদা করে নারীকে দেখা, এটা নারীকে আরও বেশি মার্জিনালাইজড করে দেয় না?
                        
আসলে নারী দিবসের পটভূমিটাই অনেক বেদনার। একেকটি অধিকার আদায়ের জন্য নারীদের কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে সেটার প্রতীক এ নারী দিবস। সে হিসাবে এটাকে কোনো সমস্যা হিসেবে না দেখে, আমি গর্ব ও উদযাপনের বিষয় হিসেবেই দেখি।

কদিন আগেও একটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। সেখানে বার্তাটি এমন ছিল, সফল নারী সেই যে সংসার ও চাকরি কিংবা ব্যবসা দুটিই সামলাতে পারেন। নারীকে কেন দশ হাতে কাজ করে শক্তির প্রমাণ দিতে হবে?

একজন নারীকে অলরাউন্ডার হতে হবে আমি এই আদর্শেই বিশ্বাস করি না। নিজের শক্তিমত্তা প্রমাণ দিতে গিয়ে সুখ জলাঞ্জলি দেয়ার পক্ষে আমি না। সংসার ভাগাভাগি ও সমঝোতার একটি জায়গা। এখানে নারী নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করতে গিয়ে শেষ হয়ে যাবেন- এটা কোনো বিচক্ষণ ধারণা হতে পারে না। আজকে আমার রান্না করতে ইচ্ছা নাই হতে পারে, আজকে অফিস করতে ইচ্ছা নাই করতে পারে। যে নারী গৃহিণীর কাজ করছেন, তিনি কিন্তু এক রকমের গাধার খাটুনি খাটছেন। দিন শেষে তাকে শুনতে হচ্ছে ঘরের কাজ নাকি কোনো কাজই না। আবার যে নারী ঘর সামলাচ্ছে এবং বাইরে উপার্জন করছেন তার জীবনটাই যায় পরিশ্রমে। আমি একজন নারী হিসেবে শক্তি প্রমাণ দেয়ার থেকে স্বাধীনতা ও শান্তির পক্ষে থাকাকে বেশি সমর্থন করি।

একজন নারী গৃহিণী হবেন নাকি চাকরি করবেন, এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এক্ষেত্রে নারী গৃহিণী হলে অনেকেই তাকে পশ্চাদপদ ভাবেন, আবার চাকরি করলে বলা হয় বেশি আধুনিক, সংসার বিমুখ। নারী আসলে কার মন জোগাবে?

কারও না। অনেকেই বলেন, আল্লাহ নারীকে সৃষ্টিই করেছেন ঘরের কাজ করার জন্য। এটা পুরুষতান্ত্রিকতার চরম পর্যায়। আমাদের মানসিকতার জায়গাটিকে আধুনিক করতে হবে। ওপরে ওপরে আধুনিকতা দেখিয়ে আসল জায়গায় গোঁড়ামি করলে যা ছিল তাই থাকবে, উন্নতি কিছু হবে না।

বর্তমান বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে নারীর অবস্থান কেমন?
নিঃসন্দেহে আগের থেকে অনেক ভালো। শহরের কথা বাদ দিয়ে গ্রামের কথাও যদি বলি; আগে গ্রাম থেকে অনেক দরিদ্র স্বল্পশিক্ষিত নারী শহরে আসতো বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য। কালক্রমে তাদের মধ্যে যারা কিছুটা শিক্ষিত তারা গার্মেন্টসে কাজ করা শুরু করল। বর্তমানে মেয়েরা সেলসম্যানের কাজ থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ করছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে আলোর বিপরীতে অন্ধকারের জায়গাটি হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতার জায়গা এখনো আছে। এ ছাড়া নারীদের নিরাপত্তার অভাব আরেকটি বড় সমস্যা। অনেক বাবা-মা আছেন যাদের দোষও দেয়া যায় না পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিচারে। তারা মেয়েকে স্বাধীনতা দিতে চান কিন্তু মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে দিতে পারেন না। নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও সহিংসতা বন্ধ করা প্রাথমিক ও প্রধান একটি বিষয় যা নিয়ে গভীরভাবে কাজ করে সমাধানে আসতে হবে।

কবে বুঝবো নারী তার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ও অধিকার পেয়ছে?
আমি একজন মেয়ের মা। সেখান থেকে একজন মা হিসেবে বললে, যেদিন দেখব আমার মেয়ে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারছে, তার নিরাপত্তা নিয়ে আমাকে ভাবতে হচ্ছে না, সেদিন আসলে নারী স্বাধীনতার স্বাদটা নিতে পারব। এ ছাড়া শিক্ষক হিসেবে বললে, আমাদের মেয়েরা অনেক ভালো করছে। তারা বড় বড় স্বপ্ন দেখছে ও তার বাস্তবায়ন করছে। তবে হল থেকে শুরু করে নানা মহলে তারা সহিংসতার শিকার। এ সহিংসতা বন্ধ হয়ে নারী যেদিন ন্যায্যতা পাবে সেদিন নারী তার অধিকার পেয়েছে এ কথা নির্ধিদ্বায় বলা যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat