×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-০৮
  • ৩২১ বার পঠিত
গত কয়েক দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতো চলছে কোটা বাতিলের আন্দোলন। রোববার থেকে সেই আন্দোলন আরও জোড়ালো করতে শুরু হয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। এরপরই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় সড়ক মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। তাদের কথা আদালতের মাধ্যমে নয়, আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করবেন।

অন্যদিকে আন্দোলনের সাত দিনের মাথায় এসে এ নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাইকোর্টের রায়, এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাবজুডিস। কারণ, আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।

এর জবাবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের একজন আসিফ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ২০১৮ সালের শুরুতে কোটার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টে রিট করতে গিয়েছিলো। তখন আদালত বলেছিলেন এটা সরকারের বিষয়, আদালতের কিছু করার নেই। সেই আদালতই  এখন রায় দিয়েছেন কোটার বহাল রাখার জন্য। একই আদালতের দুই রকম কথা হতে পারে না। সরকার চাইলে এর যৌক্তিক সমাধান করতে পারে।

অন্যদিকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, সরকারের হাতে সমাধান আছে। সরকার কোটা বহালের উচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করে তা আবার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাতিল করতে পারে। তাতেই সমাধান।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরো বিষয়টি এখন বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এটা শেষ হওয়ার  আগে সরকারের করার কিছু নেই।

কোটাবিরোধী আন্দোলন এবারই নতুন নয়। কোটাবিরোধী আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে। পরিপত্র জারি করে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্পোরেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়। নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি পাঁচ ও প্রতিবন্ধীদের এক শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।

এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বাতিল চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে। গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার আদেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রপক্ষ' আবেদন করলে ৪ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে নিয়মিত আপিল করতে বলেন। ফলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি  চাকরিতে কোট বহাল থাকছে। আর বিরুদ্ধে এখন আন্দোলন চলছে।

আদালতের বাইরে কি সমাধান সম্ভব?

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, যারা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা তো পুরোপুরি কোটা বাতিল চাইছে না। তার চাইছে সংস্কার। মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা আর দরকার নাই। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের আর কারো সরকারি চাকরির বয়স আছে বলে মনে হয় না, তাদের থার্ড জেনারেশন চলছে। আদিবাসী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি,  অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও ক্ষেত্র বিশেষে নারীদের জন্য কিছু- এভাবে সর্বোচ্চ ১০-১২ শতাংশ কোট রাখা যায়। এজন্য সরকার ওই কৌশলে আদালতের রায় বাস্তবায়ন ও পরে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংস্কার করতে পারে। প্রয়োজনে এজন্য একটি কমিশনও গঠন করা যায়।

তবে তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এখন তো বিষয়টি বিচারাধীন , বিচারবিভাগের অধীনে। এখন তো কারও কিছু করার নাই। আমরা হাইকোর্টের রায়ের পর পরই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আপিল শুনানির জন্য আদালত সময় নিয়েছে। শুনানির পর আদালত কী সিদ্ধান্ত দেয় সেটা দেখতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালে তো কিছু করা যাবেনা।

আদালতের রায় সরকার বাস্তবায়ন করে তার পর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আবার সরকার কোটা বাতিল করতে পারে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবসময় সরকারের হাতে সব কিছু থাকে না। দেখা যাক আপিল বিভাগ রায়ে কী বলেন। ওটা দেখে তারপর সরকার কিছু করতে পারে। বিচারাধীন বিষয়ে সরকার তো কিছু করতে পারে না। আমাদের আদালতের তো কিছু রীতিনীতি আছে। সেখানে তো সরকার হাত দিতে পারে না। 

অন্যদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল  বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে অপেক্ষা না করে হঠাৎ করে রাস্তায় নেমে এলাম, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিলাম, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে কি না, প্রশ্ন থাকতে পারে। স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করার জন্য অনেকেই অনেকভাবে উসকানি দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat