চট্টগ্রামে এক গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার লকার থেকে ১৪০ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েবের অভিযোগ তোলার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে।
শনিবার স্বর্ণ গায়েবের অভিযোগ জানাজানি হওয়ার পর রোববার (২ জুন) এক চিঠিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী ও তার কন্যা নাসিয়া মারজুকা যৌথ নামে ২০০৬ সাল থেকে ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করে আসছেন। প্রতিটি লকার খোলার জন্য ২টি চাবির প্রয়োজন হয়। যার একটি গ্রাহক ও অপরটি ব্যাংকের কাছে থাকে। গ্রাহকের চাবি ব্যতীত শুধুমাত্র ব্যাংকে রক্ষিত চাবি দিয়ে কোনোভাবেই লকার খোলা সম্ভব নয়। ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহককে তার লকারের মূল চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়। লকারে রক্ষিত মালামাল ও তার পরিমাণ সম্পর্কে একমাত্র গ্রাহক ব্যতীত ব্যাংকার বা অন্য কোনো ব্যক্তির জানার সুযোগ নেই।
চিঠিতে বলা হয়, গত ৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে উক্ত গ্রাহক লকার ব্যবহারের জন্য ব্যাংকে আসেন। ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের উপস্থিতিতে মাস্টার কী (চাবি) দিয়ে লকার আনলক করেন। পরবর্তীতে, গ্রাহক যথারীতি তার কাছে রক্ষিত চাবি ব্যবহার করে পরিপূর্ণভাবে লকার খুলে কাজ শেষে লকার বন্ধ করে ব্যাংকারকে অবহিত করে চলে যান। যেহেতু লকার হোল্ডারের চাবি দিয়ে বন্ধ করা হয়, তাই লকার বন্ধ করার সময় নিয়ম মোতাবেক ব্যাংকের কারো উপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। একমাত্র তিনিই তার লকার বন্ধ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, লকার হোল্ডার লকার বন্ধ না করা পর্যন্ত তার চাবি বের করে আনা যায় না। গ্রাহক নির্দিষ্ট লকারে কী নিয়ে গেছেন বা রেখে গেছেন, তা ব্যাংকের জানার সুযোগ নেই। গ্রাহক যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাংক কর্মকর্তা লকার রুমের মূল ফটক নিয়ম মাফিক তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ২৯ মে ২০২৪ তারিখে উক্ত লকার হোল্ডার তার লকার ব্যবহার করতে এসে তার গহনা খোয়া গেছে বলে জানান। অথচ এর আগে তিনি নিজে লকার বন্ধ করে চাবি নিয়ে গেছেন। তারপর লকার হোল্ডার একবার বলেন, তার ৩০০ ভরি স্বর্ণ নেই। কিছুক্ষণ পর আবার জানান, ১৫০ ভরি স্বর্ণ নেই। কিছুক্ষণ পর আবার জানান, ১৫০ ভরির মধ্যে অর্ধেক পেয়েছেন, বাকী অর্ধেক পাননি। এ ধরণের স্ববিরোধী বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর চট্টগ্রামের চকবাজার থানার পুলিশ ফোর্স সরেজমিন লকার রুম পরিদর্শন করেন। ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির প্রদত্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার গায়েব হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ব্যাংকটির চকবাজার শাখার গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী। তিনি দাবি করেন, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এসব স্বর্ণ সরিয়ে ফেলেছেন। লকার থেকে স্বর্ণ গায়েব হওয়ার পর চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে থানা পুলিশ রহস্যজনক কারণে তা নেয়নি। এখন এ ঘটনায় আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ জাতীয় আরো খবর..