গত বছরের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেকার বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ। বছরের প্রথম তিন মাসে নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যদিও বাস্তবে এই বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গতকাল সোমবার চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার, যা তার আগের প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেকারের সংখ্যা ছিল সাড়ে ২৩ লাখ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার।
বিবিএস বলছে, সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি; কিন্তু কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তাদেরই বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এমনকি জরিপের আগে ৩০ দিন বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে যাঁরা কাজ খুঁজেছেন, তাঁরাও বেকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্ব হিসাবের এই পদ্ধতিতে গলদ আছে। এই সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং এই সংজ্ঞা দেশের মোট উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানের মধ্যকার মৌলিক ভারসাম্যহীনতাকেই প্রতিফলিত করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহম্মদ মইনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বিবিএস বেকারত্বের যে হিসাব দেয় তা সঠিক নয়। তাদের সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই বেকারত্বের সঠিক সংজ্ঞা নিরূপণ এবং তা চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তকে সংস্কারের অংশ হিসেবে সামনে আনা জরুরি।
বিবিএসের তথ্য মতে, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত বেকার। অথচ যাদের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাদের বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ।
অর্থাৎ মানসম্মত শিক্ষার অভাবেই দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি বাড়ছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা বেকারের হার ৮.৭৮ শতাংশ। মাধ্যমিক শেষ করা বেকারের হার ২.৪২ শতাংশ। প্রাথমিক শেষ করা বেকারের হার ১.৬৯ শতাংশ। আর অন্য কোনো মাধ্যমে যারা শিক্ষা গ্রহণ করেছে তাদের বেকারত্বের হার ৪.৮৭ শতাংশ।
শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে দেশের শ্রমশক্তিতে আছেন সাত কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ চার কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী দুই কোটি ৫৩ লাখ। তিন মাস আগে মোট জনসংখ্যার মধ্যে শ্রমশক্তিতে ছিল সাত কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে দুই লাখ ৯০ হাজার।
জনগোষ্ঠী বাড়লেও সেই তুলনায় দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে থাকা জনসংখ্যার মধ্যে কর্মে নিয়োজিত নারী-পুরুষের সংখ্যা সাত কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার। সেই হিসাবে শ্রমশক্তিতে থাকা বাকিরা বেকার। তিন মাস আগে কর্মে নিয়োজিত ছিল সাত কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা বেড়েছে ৫০ হাজার। কিন্তু একই সময়ে দুই লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়ায় বেকার বেড়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার।
দেশে মোট বেকারের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। সর্বশেষ প্রতিবেদন হিসেবে মোট বেকারের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪০ হাজার, আর নারী বেকারের সংখ্যা আট লাখ ৫০ হাজার। তিন মাস আগে দেশে পুরুষ বেকার ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার, আর নারী বেকার ছিল সাত লাখ ৮০ হাজার। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে দেশে পুরুষ বেকার বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার, আর নারী বেকার বেড়েছে ৭০ হাজার।
বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে ৩.৫১ শতাংশ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের হার ৩.৫৯ শতাংশ, নারী বেকারের হার ৩.৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ নারী বেকারের চেয়ে পুরুষ বেকার হার ০.২৩ শতাংশ বেশি।
এদিকে বেকারের বাইরে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছে, যাদের বড় অংশই শিক্ষার্থী, অসুস্থ ও অবসরপ্রাপ্ত।
এ জাতীয় আরো খবর..