×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-১৪
  • ৪০ বার পঠিত
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নানা সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে চায় সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে তারা সরকারকে চাপ দেবে না। দলে সংস্কার এবং নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এ কথা জানিয়েছেন।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলা হলেও এটিই দলের প্রকৃত অবস্থান নয়। আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় থাকুক। তাদের হাত ধরে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি চালু হোক, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার হোক। এই ফাঁকে আগামী এক-দুই বছর দল গোছানোর কাজ করবে আওয়ামী লীগ।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতার মতে, টানা ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক ভুলত্রুটি হয়েছে। দলের মধ্যে কোন্দল চরমে পৌঁছে যায়। নেতাদের অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনার কাজও করছিল।

কিন্তু তা হয়তো জনগণের মনে আস্থা জাগাতে পারেনি। এখন এসবের মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগ পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে। তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমরা চাই, যাঁরা রাষ্ট্র সংস্কারের ডাক দিয়ে ক্ষমতা দখল করলেন, তাঁরা সেগুলো বাস্তবায়ন করুন। এই সময়ের মধ্যে আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধন করার কাজ করব। গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আবার ফিরবে আওয়ামী লীগ।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে কতটুকু গণতান্ত্রিক সুযোগ দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতা। এই সন্দেহের কারণ হিসেবে জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করা, আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এবং একাধিক নেতার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার কথা উল্লেখ করেন তাঁরা।

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগকে চাপে রাখতে নানা মিথ্যা মামলা হতে পারে। নেতাদের চরিত্র হননে নানা বানোয়াট গল্প প্রচারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ফলে এই দলের জন্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ কতটা থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবিপ্লবের চেষ্টার কথা গুজব, দাবি নেতাদের

আওয়ামী লীগ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করছে—এমন একটি অভিযোগ একাধিক মহল থেকে তোলা হয়েছে। এর ফলে ১৫ আগস্টে শোক দিবসের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার শঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নিজেদের মধ্যে আলাপ করে একটি সংক্ষিপ্ত জবাব তৈরি করেছেন। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বক্তব্য কালের কণ্ঠকে জানান।

বক্তব্যে বলা হয়, আওয়ামী লীগ প্রতিবিপ্লবের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বরং আওয়ামী লীগ প্রতিবিপ্লবের শিকার হয়েছে। ১৯৭৫ সালে প্রতিবিপ্লবে অবলা নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে ১৫ আগস্টের কর্মসূচি ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে। ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান আয়োজনে আমরা সরকার ও দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চাই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আরেকজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আছেন। অনেক জায়গায় তাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এর ফলে ক্ষমতা দখলকারীরা ভীত হয়ে নানা গুজব ছড়াচ্ছে।

আতঙ্ক কমলে প্রকাশ্যে আসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা

ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় এক ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনের নামে হত্যা মামলা করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রীসহ দলের আরো নেতার নামে মামলার আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। কারা এসব মামলার আসামি হন, কাদের গ্রেপ্তার করা হয়, এসব দেখে ধীরেসুস্থে মাঠে নামবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এগুলো প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এগুলোর বিচারের কথা কেউ বলছে না।’

দলের পরিস্থিতি বিষয়ে ওই নেতা বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা, যোগাযোগ করছি। পরিস্থিতি বুঝে শিগগিরই আমরা দলের কর্মকাণ্ড শুরু করব।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পুত্র যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা একটু সময় নিচ্ছি নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। আশা করি, আগামীকাল জাতীয় শোক দিবসে আমাদের নেতাকর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবেন।’

তৃণমূলে যোগাযোগ করছেন শেখ হাসিনা

তৃণমূলের কর্মীদেরই আওয়ামী লীগের প্রাণ মনে করা হয়। তাই সরকার পতনের পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের আগে তৃণমূলে কথা বলছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র জানায়, ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। কোন পরিস্থিতিতে তিনি ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন তা ব্যাখ্যা করছেন। দলের বিপদের দিনে সবাইকে এক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝে মাঠের কর্মসূচি পালনের কথাও বলছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিসভার সাবেক এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে আগে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাই সারা দেশে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

১৫ আগস্টে দলীয় কর্মসূচি

আগামীকাল ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং সারা দেশে দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করে কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সাড়ে ৮টায় মিলাদ মাহফিল। সকাল ৯টায় কলাবাগান মাঠ থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত মৌন মিছিল। সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন। দুপুর ১২টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া বাদ জোহর দেশব্যাপী মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat