চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর থেকে চকবাজার হয়ে কোতোয়ালি পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কে অন্তত দেড় শ অটোটেম্পো চলাচল করছে। দৈনিক এই রুটের প্রতিটি অটোটেম্পো থেকে মুরাদপুরে ১৬০ টাকা, চকবাজারে ১০ টাকা ও কোতোয়ালি এলাকায় ১০ টাকা করে চাঁদা আদায় করত একটি চক্র। সরকার পতনের পর ছাত্ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ শুরু করায় এখন চাঁদাবাজদের দেখা যাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রটি সক্রিয় ছিল রাজনৈতিক ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায়।
শুধু এই রুটের অটোটেম্পো থেকে দৈনিক ২৭ হাজার টাকা হিসেবে প্রতি মাসে আট লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি হতো।
গত সোমবার রাতে যাত্রী নিয়ে চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লা যাওয়ার পথে স্থানীয় অটোটেম্পোচালক মোহাম্মদ শওকত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে প্রতিদিন রাস্তায় গাড়ি নামালেই তিনটি স্পটে আমাদের ১৮০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। এর বাইরে সড়কে আরো খরচ হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ছাত্ররা এখন রাস্তায় থাকায় চাঁদা ছাড়াই আমরা গাড়ি চালাতে পারছি।
চট্টগ্রাম নগরে চলাচলের জন্য ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার রুট পারমিট রয়েছে। এসব গাড়ি নতুনপাড়া, কাপ্তাই রাস্তার মোড়, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় গেলে ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। গতকাল মঙ্গলবার সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার পর থেকে আমাদের আর চাঁদা দিতে হয় না। আগে বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিলে ১০ টাকা করে দিতে হতো।
লিটন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘অফিসে যাওয়ার পথে অনেক সময় নতুনপাড়া থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে আগ্রাবাদ যাই। চালকরা বলেন, এখানে ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে, তাই ভাড়া ১০ টাকা বেশি দিতে হবে। কয়েক দিন ধরে আমাদের বাড়তি ভাড়া দিতে হয় না।’
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতিদিন ‘ওয়েবিল’ এর নামে বাস-মিনিবাস-হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন গাড়ি থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করত চাঁদাবাজরা। এই কারণে মালিক-শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন।
হঠাৎ কয়েক দিন ধরে সড়কে চাঁদাবাজদের দেখা যাচ্ছে না। তাই পরিবহন মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিক এবং যাত্রীরাও খুশি।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দলের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদা আদায় করছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদেরই একটি চক্র।
অটোটেম্পোচালক ফোরকান উদ্দিন জানান, চকবাজার, দেওয়ানহাট, হালিশহর, আগ্রাবাদ, বন্দরটিলা, ২ নম্বর গেট, অক্সিজেন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাটসহ অনেক সড়কে অটোটেম্পো থেকে গাড়িপ্রতি দৈনিক দেড় শ থেকে দুই শ টাকা চাঁদা দিতে হতো। এখন চাঁদা দিতে হচ্ছে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন সড়কে ওয়েবিলের নামে গাড়িপ্রতি অন্তত ১৫০ টাকা করে আদায় করা হতো। আবার যেসব হিউম্যান হলারে (হাল্কা যান) গাড়ির যথাযথ কাগজপত্র নেই, সেগুলো থেকে মাসে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হতো। এখন সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ।’
এ জাতীয় আরো খবর..