×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-১৫
  • ৫৮ বার পঠিত
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড অফিসার তারেকুল ইসলামের বাড়ি ফরিদপুরের গ্রামের বইছে আনন্দের জোয়ার। ঘরে ফিরতেই বুকে জড়িয়ে ধরেন তার বাবা ও মা; আর স্ত্রীর চোখে ছিল এ সময় আনন্দাশ্রু।

বুধবার (১৫ মে) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বড় ভাই হাসানের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছান তারেকুল। বাড়িতে ঢুকতেই হাসি ফোটে ওঠে সবার মুখে। তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেছেন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী।

সরেজমিনে তারেকুলের বাড়িতে দেখা যায়, বাড়িতে ঢুকার পরই বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা হাসিনা বেগম বুকে জড়িয়ে নেন সন্তানকে। এ সময় স্ত্রী নুসরাত জাহান জুথীসহ সবার চোখেই আনন্দাশ্রু। তারেকুল তার দেড় বছর বয়সি একমাত্র কন্যা তানজিহাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করছেন। আনন্দাশ্রুর মধ্যেও স্ত্রী জুথীর মুখে হাসি। স্বামীকে দেখতে পেয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। তারেকুলের কোল থেকে নামছেই না মেয়ে তানজিহা।

তারেকুল বাড়িতে আসায় সকাল থেকেই নানা আয়োজন চলছে। তারেকুলের স্ত্রী আগে থেকেই কেক এনে রেখেছেন; সবাই মিলে কেক কাটলেন; একে অপরকে খাইয়ে দিলেন। তৈরি করা হচ্ছে তারেকুলের পছন্দের চিতই পিঠা, আর মাংস। এছাড়া শোল মাছসহ নানা পদের রান্নাও হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘আম্মা আমি মুক্তি পেয়েছি’ শুনেই কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেছে: তারেকুলের মা

তারেকুলের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমরাতো এবার ঈদ করতে পারি নাই। আগেই বলেছিলাম, ছেলে যেদিন বাড়িতে আসবে, সেই দিনই আমাদের ঈদ। আজ আমাদের ঈদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেকে কাছে পেয়ে কী যে ভালো লাগছে তা বোঝাতে পারবো না। নামাজ পড়েছি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলের পছন্দের বিভিন্ন খাবার রান্না করছি। আত্মীয়স্বজন, আর পাড়া-প্রতিবেশীরা আসছেন; সবাই খুব খুশি।’

তারেকুলের বাবা বলেন, ‘নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলে সুস্থভাবে বাড়িতে আসায় খুবই খুশি; যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জাহাজ কোম্পানিসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৬৫ দিন আমাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যখনই ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে তখনই আর ভাবতে পারি না।’

তারেকুল ইসলাম বলেন, জীবনের ওই কটা দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এখন অনেক ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম হয়তো আর কোনদিন কারো সঙ্গে দেখা হবে না। আল্লাহর রহমতে বাবা-মার দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এসেছি। আমাদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুর্বিষহ দিন কেটেছে। কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। সব সময় আতঙ্কের মধ্যদিয়ে দিন পার করতে হয়েছে। এ রকম দিন যেন কারো জীবনে না আসে। তারপরও সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছি, অনেক ভালো লাগছে।’

তারেকুলের স্ত্রী জুথী বলেন, ‘অনেক খুশি, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তারেকুলের জন্য বিশেষ আয়োজন রয়েছে। আজকের দিনটি আমাদের ঈদ।’

অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মো. তারেকুল ইসলাম। ছকড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে যোগ দেন চাকরিতে।

সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে। ভারত মহাসাগর অতিক্রমকালে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েন। তারা তেইশ নাবিকের মধ্যে ফরিদপুরের সন্তান তারেকুলও পণবন্দি হিসেবে জিম্মি করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে করেন নাটোরের মেয়ে তৎকালীন মেডিকেলের ছাত্রী নুসরাত জাহান জুথীকে। বিবাহিত তারেকুল-জুথি দম্পতির তানজিহা নামে এক বছর পাঁচ মাস বয়সি একটি মেয়ে আছে।

গত বছরের ২২ নভেম্বর বাড়ি থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন তারেকুল। এরপর ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হন। ৬৪ দিন পর দেশের মটিতে পা রাখেন। ১৫ মে দীর্ঘ ৫ মাস ২৩ দিন পর বাড়িতে ফিরলেন তারেকুল।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat